সড়ক দূর্ঘটনা! দায়বার কার!

সড়ক দূর্ঘটনা!  দায়বার কার!



Image result for road accident



প্রতিনিয়ত অহরহ প্রাণ ঝরছে দেশের আনাচে কানাচে। যার কতেক সম্পর্কে আমরা অবগত হই আর কতেক অজানাই থেকে যায়। নেই কোন নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান। থেকেই বা কী হবে!  সর্বোচ্চ আফসোস আর সমবেদনা ছাড়া আমাদের আর কোন দায়দায়িত্ব আছে বলে মনে হয়না। মাঝে মাঝে এমনও হয় যে ভুক্তভোগীদের প্রতি সমবেদনা জানানোকে আমরা অনেক বড় সহানুভূতি বলে ভাবি। যা খুবই দুঃখজনক একই সাথে হতাশাজনকও।
এই ভেবে প্রশান্তি পাই যে 'আমারতো কেউ মারা যায়নি,নিজের কাউকেতো হারাইনি বা নিজের আত্মীয়পরিজন কেউতো আর  ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তাই শুধু শুধু এসব নিয়ে ভাবার কী দরকার!'
'এসবতো নিত্যনতুন কোন ঘটনা নয়,প্রতিনিয়ত হচ্ছে হবেও। আর সব কি চালকের দোষে হয়, উনাদেরও তো দোষ ছিল' ব্লা ব্লা......
ছি! কত বিশ্রী লেভেলে আমরা আছি।ভাবতেই অবাক লাগে কতটা নিচ আমরা।  একবারও ভাবিনা সেই শোকাতপ্ত পরিবারের কথা যাদের পুরো ভেতরটাই শূন্য,শুষ্ক, রুক্ষ হয়ে আছে নিজেদের প্রিয়জনকে হারিয়ে। প্রিয়জন হারানোর এমন ভয়ঙ্কর আর অস্বাভাবিক পন্থা তাদের অন্তরকে বার বার কাঁপিয়ে তুলে। স্বজন হারানোর যন্ত্রণা তাদেরকে প্রতিমুহূর্ত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
আমরা একটিবারও তাদের কথা ভাবার সময় পাইনা বা ভাবতেও চাইনা। এই ভয়ঙ্কর অধ্যায় আর অস্বাভাবিক পন্থা যে একটি একটি চলমান প্রক্রিয়া তা যেন আমাদের মাথায় আসেইনা। আজকে অন্য একটা পরিবারের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, কালকে যে আমার এবং আমার পরিবারের উপর দিয়ে বয়ে যাবে এই আশংকা যেন একটুও শঙ্কিত করে তুলেনা আমাদেরকে। আমরা যতটা না নিষ্ঠুর, নির্বুদ্ধিতায় তার চেয়ে কোন অংশে কম নয় । নাহয় এমন একটি বিষয় নিয়ে আমরা উদাসীন থাকতে পারি কিভাবে! আদৌ কি আমরা বিষয়টা নিয়ে ভাবছি! যদি উত্তর আসে হ্যাঁ, তবে এর প্রতিকারে আমরা কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, এই হারটা হ্রাস পাচ্ছেনা কেন,দিন দিন এ বিষয়টা মহড়া দিয়ে উঠছে কেন! স্বভাবত এই প্রশ্নগুলোই সম্মুখে আসবে। যদি প্রশ্নগুলোর যথাযথ কোন উত্তর না থাকে তবে ধরে নিতে হবে আমাদের ভাবনা ভুল এবং ত্রুটিপূর্ণ বা বাস্তবসম্মত নয়। কারণ, যদি এই হার না হ্রাস পায়, ইতিবাচক কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়না তাহলে এ কেমন ভাবনা!
আমরা বেশিরভাগ সময় এসবের দায়বার গাড়ি চালকের উপর চাপিয়ে দেই।   গাড়ি চালক মানুষ না, অপ্রাপ্তবয়স্ক, লাইসেন্স নেই,গাজাখোর, নেশা পানি করে গাড়ি চালায়,অশিক্ষিত গণ্ডমূর্খ আর কত কিছু বলে গালিগালাজ করি।
 অথচ এই দায়বার আর দোষ কি শুধুই গাড়ি চালকের!  না এতে অন্যকারো দায়বার আছে তা কি কখনও ভেবে দেখেছি!!
আমার মতে এসবের দায়বার মূলত আমাদের সমাজের। এ সমাজ আমাকে আপনাকে নিরাপদ সড়ক উপহার দিতে পারেনি। এ সমাজ আমাকে আপনাকে নিরাপদে পথচলা সহজ করে দিতে পারেনি।
সমাজ যদি যথেষ্ট কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে লাইসেন্স বিহীন,অপ্রাপ্তবয়স্কক আর এবড়ো তেবড়ো যে কাউকে ড্রাইভিং সিটে বসতে হতোনা।
তাছাড়া এই লাইসেন্স ব্যবস্থার নামে যে অপকর্ম হচ্ছে তা সম্পূর্ণ রূপে দূর করে  এর একটা সুষ্ঠু, সুন্দর, পরিকল্পিত-পরিমার্জিত একটা ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। যথাযথ বিচার বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট মেয়াদে এবং গ্রহনযোগ্য লাইসেন্স প্রদান করা হোক।
তাছাড়া, গাড়ি চালকের বেশিরভাগই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত না। না আছে ভালো কোন ট্রেইনিং সেন্টার,না আছে এ বিষয় নিয়ে কোন চিন্তা-ভাবনা! চলছেতো চলছেই। অনিয়ম,দূর্নীতি আর ছিচকে লোভ পরিহার না করলে এসব বিষয়ের ভালো কোন ব্যবস্থা নেয়া আদৌ সম্ভব!
গাড়ি চালকদের একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধ, মানবিকতা, মানবিক গুণাবলি অর্জনের দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের চিন্তাধারা,উপস্থিত মাথা খাটানোর বুদ্ধি এসব বিষয়ে আরও অধিক সচেতন হতে হবে।
রাষ্ট্র তাদেরকে সুশৃঙ্খল ও যথোপযুক্ত সকল ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
সবিশেষ আমাদের নিজেদেরকে, পথচারীদেরকে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। নিজে নিজেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে রাখতে হবে। কারণ দিন শেষে যে হারায় সে_ই  বোঝে কী হারিয়েছে। আর তা কতটুকু পীড়াদায়ক!
শুধু শুধু গাড়ি চালকদের উপর দায়বার চাপিয়ে, আর শোকাতপ্ত পরিবারের প্রতি লোকদেখানো সমবেদনা না জানিয়ে আসুন নিজেরা এসকল বিষয় নিয়ে ভাবি। সমাজের ক্ষমতাবানদের নিকট আমাদের চিন্তা ভাবনাগুলো তুলে ধরি। আর ক্ষমতাবানরাও এসব বিষয় যথেষ্ট আগ্রহ ও গুরুত্বের সাথে গ্রহন করে সেগুলো যযথাযোগ্য বিচার বিবেচনা করে উপযুক্ত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করতঃ সেগুলো  এপ্লাই করে দেশ ও জাতিকে নিরাপদ ও শঙ্কামুক্ত সমাজ উপহার দিবেন বলে আশা রাখি।  

Comments